• শনিবার ২৯ জুন ২০২৪ ||

  • আষাঢ় ১৫ ১৪৩১

  • || ২১ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৫

আলোকিত ভোলা
ব্রেকিং:
এসএসএফ সদস্যদের পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোর আহ্বান রাষ্ট্রপতির প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা দুই বছরের করার পরিকল্পনা সরকারের বাংলাদেশের জনগণের কাছে আমি কৃতজ্ঞ : শেখ হাসিনা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে আমি মারা যাব: প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে মাদক অপরাধীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি প্রয়োগ করছে সরকার নোবেল পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আমার নেই : শেখ হাসিনা সহজে এলডিসি উত্তরণে সুইডেনের সমর্থন চাইলেন প্রধানমন্ত্রী ড. ইউনূস কর ফাঁকি দিয়েছেন, তা আদালতে প্রমাণিত: প্রধানমন্ত্রী ‘শেখ হাসিনা দেশ বিক্রি করে না’ অভিন্ন নদীর টেকসই ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার পথ নিয়ে আলোচনা করেছি সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে বহুমাত্রিক করেছে: প্রধানমন্ত্রী অনেক হিরার টুকরা ছড়িয়ে আছে, কুড়িয়ে নিতে হবে বারবার ভস্ম থেকে জেগে উঠেছে আওয়ামী লীগ: শেখ হাসিনা টেকসই ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে যৌথ দৃষ্টিভঙ্গিতে সম্মত: প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্র রক্ষায় আ. লীগ নেতাকর্মীদের সর্বদা প্রস্তুত থাকার নির্দেশ আওয়ামী লীগের প্লাটিনাম জয়ন্তীতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা আওয়ামী লীগের প্লাটিনাম জয়ন্তী আজ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ১০ চুক্তি সই

চোখের নীরব ঘাতক গ্লুকোমা

আলোকিত ভোলা

প্রকাশিত: ৯ ডিসেম্বর ২০১৮  

গ্লুকোমা চোখের জটিল রোগ।বিশ্বজুড়ে অন্ধত্বের দ্বিতীয় কারন এই গ্লুকোমা। এই রোগের চোখের নার্ভ স্নায়ু নষ্ট হয়ে যায়। সময় মতো চিকিৎসা না নিলে রোগ জটিল আকার ধারণ করতে পারে।গ্লুকোমা পুরোপুরি প্রতিরোধ করা যায় না। তবে দ্রুত চিকিৎসা নিলে গ্লুকোমার কারণে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বা অন্ধত্ব প্রতিরোধ করা যায়।সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না পেলে রোগী অন্ধ হয়ে যেতে পারে। গ্লুকোমা রোগে দৃষ্টির যে ক্ষতি হয়, তা কখনো ফেরত পাওয়া সম্ভব নয়

গ্লুকোমা বিষয়টি কীঃ

গ্লুকোমা চোখের একটি রোগ। এই রোগ চোখের নিরব ঘাতক হিসেবেও পরিচিত,এ রোগ চোখের দৃষ্টি নষ্ট করে দেয়। চোখের একটি স্বাভাবিক চাপ রয়েছে। গ্লুকোমা রোগে সাধারণত চোখের চাপ বেড়ে যায়।। চোখের উচ্চ চাপকে অকুলার হাইপার টেনশন বলে। এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক চোখের চাপ ১১-২১ মি. মি. মার্কারীর চেয়ে বেশি হলেই অকুলার-হাইপার টেনশন বলে।চোখে অপটিক নার্ভ থাকে। অকুলার হাইপারটেনশন এ অপটিক নার্ভের ফাইবারগুলো আস্তে আস্তে নষ্ট হতে থাকে, গ্লুকোমা রোগের জন্য। চোখের চাপ বৃদ্ধি পেয়ে আস্তে আস্তে নার্ভের ফাইবারগুলো নষ্ট হয়ে যায়। একটি নার্ভের মধ্যে ১ দশমিক ২ মিলিয়ন ফাইবার থাকে। এই ফাইবারগুলো আস্তে আস্তে নষ্ট হয়।
তবে একটা জিনিস মনে রাখা দরকার, গ্লুকোমা রোগে সাধারণত চাপ বাড়ে। তবে চাপ স্বাভাবিক থাকা অবস্থায়ও কারো কারো গ্লুকোমা রোগ হতে পারে।
দুই রকমের গ্লুকোমা রয়েছে। একটি হলো, বাচ্চাদের গ্লুকোমা এ বড়দের গ্লুকোমা। বড়দের গ্লুকোমার মধ্যে একটিকে বলে ওপেন এঙ্গেল গ্লুকোমা। আরেকটি হলো, ন্যারো এঙ্গেল গ্লুকোমা। ওপেন এঙ্গেল গ্লুকোমাকে বেশি ক্ষতিকর হিসেবে ধরা হয়। কারণ এই গ্লুকোমাটা রোগী বুঝতে পারে না। এতে আস্তে আস্তে চোখের ক্ষতি হতে থাকে। গ্লুকোমার যে নার্ভ ফাইবারগুলো নষ্ট হয়, এগুলো চিরস্থায়ীভাবে নষ্ট হয়। চোখ একবার নষ্ট হলে আর ভালো হয় না।
হাত পায়ের নার্ভে একবার আঘাত লাগলে ভালো হয়। চোখের নার্ভ একবার নষ্ট হলে এটি আর কখনো ফিরে আসে না।

গ্লুকোমা হওয়ার কারণঃ

*চোখের মণির পাশের যে এঙ্গেল থাকে, সেটি যদি ছোট হয়ে যায় বা সরু হয়ে যায় সমস্যা হয়। ট্রাবিকুলাম বলে একটি বস্তু রয়েছে, এর ভেতর দিয়ে চোখের পানি প্রবাহিত হয়। এই পানি প্রবাহিত হওয়ার সময় যদি কোনো বাধার সম্মুখীন হয়, সেক্ষেত্রে চোখের চাপ বাড়ে। এটি চোখের ভেতরের কোনো কোনো সমস্যার কারণেও হতে পারে এবং শরীরের অন্যান্য কিছু কারণ রয়েছে, এর জন্যও হতে পারে।

*ছানির অস্ত্রোপচার না হলে  গ্লুকোমা হতে পারেঃ

ছানি যদি সময়মতো অস্ত্রোপচার না করা যায়, সেক্ষেত্রে চোখের চাপ বেড়ে, এর পেছনে যে আইরিশ রয়েছে, এটি সামনের দিকে চলে আসে। যার জন্য এঙ্গেল ছোট হয়ে যায় এবং চোখের চাপ বাড়ে।

*এ ছাড়া আরো কিছু কারণ রয়েছে।
তাই গ্লুকোমা রোগের শুরুতে এটি চিহ্নিত করা প্রয়োজন। ন্যারো এঙ্গেল গ্লুকোমার কারণে চোখ লাল হয়, চোখ ব্যথা হয়, চোখের দৃষ্টি কমে যায় এবং তীব্র ব্যথা হতে পারে। সেটি হলে রোগী সাধারণত চিকিৎসকের কাছে যায়। চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে কোনো উপায় থাকে না। এটির রোগ নির্ণয় তাড়াতাড়ি হয়।

গ্লুকোমা রোগ আগেভাগে নির্ণয়ের উপায়ঃ

*ওপেন অনসেট গ্লুকোমা সাধারণত চল্লিশের কাছাকাছি সময়ে হয়। যারা চল্লিশ বছরের কাছাকাছি বয়সের তারা চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে পরামর্শ নেবেন। চিকিৎসকও দেখবেন রোগটি হয়েছে কি না।

*যদি কারো পরিবারে গ্লুকোমা থাকে, তাদের অবশ্যই ৪০ বছর বয়সের পর চোখ পরীক্ষা করতে হবে।

*গ্লুকোমার পরীক্ষা কত বছর পর পর করতে হবেঃ

যারা চাকরি করেন তাঁদের একটি বাৎসরিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হয়। যাদের বয়স চল্লিশের বেশি প্রতি বছর তাদের চোখ পরীক্ষা করতে হবে। চোখের কোনো রোগ আছে কি না দেখতে হবে। এ ছাড়া, ৪০ বছর বয়স হলে আমরা কাছে পড়তে পারি না, তখনও একটি পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।
এ ছাড়া সরকারি বেসরকারি সংস্থা, গ্লুকোমা সোসাইটি-তাদের ও উচিত  সারা দেশে রোগ নির্ণয়ের প্রক্রিয়া শুরু করা। গ্লুকোমা রোগের শুরুতে যদি রোগ নির্ণয় করা যায় এর চিকিৎসা করা সহজ হবে।

গ্লুকোমা নির্ণয়ের উপায় কিঃ

চোখের প্রেসার যন্ত্র টনোমিটার দিয়ে। ১১-২১ মি. মি.- এর বেশি চাপ  হলে গ্লুকোমা অফথালমোসকোপ দিয়ে অপটিক স্নায়ুর পরিবর্তন হয়েছে কি-না দেখা। দৃষ্টি পরিধি বা ভিস্যুয়াল ফিল্ড দেখার যন্ত্র পেরিমিটার/এনালাইসার (হামফ্রে বা অক্টোপাস দিয়ে)। চোখের কোণ সরু কি-না দেখে। চোখের দৃষ্টিশক্তির লক্ষণগুসমূহ আলোচনা। আলোর পার্শ্বে রংধনুর মত দেখা। চোখে ব্যথা হওয়া। মাথা ব্যথা ও মাথা ঘোরা। চোখ লাল হওয়া/ঝাপসা দৃষ্টি। চোখ দিয়ে পানি পড়া। চোখে ঝাপসা দেখা। বমি হওয়া, দৃষ্টি পরিধি কমে যাওয়া (ভিস্যুাল ফিল্ড), মনি বড় হওয়া (মিড ডাইলেটেড পিউপিল), শেষের দিকে চোখ সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যাওয়া। এসব লক্ষন ত থাকেই তবে অন্ধ হওয়ার আগে উক্ত লক্ষন সহ চিকিৎসক এর নিকট গেলে চোখের চাপ এবং ভিস্যুয়াল ফিল্ড পরীক্ষাকরে গ্লুকোমা আছে কিনা চিকিৎসক বুঝতে পারেন।

গ্লুকোমা রোগ হওয়ার বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেনঃ
*৪০ঊর্ধ্ব বয়সীরা
*বংশগত গ্লুকোমা রোগ
*আফ্রিকান এবং হিস্পেনিক গোষ্ঠী
*এশিয়ান গোষ্ঠী (এশিয়ানদের মধ্যে এঙ্গেল ক্লোসার গ্লুকোমা আর জাপানিসদের লো টেনশন গ্লূকোমার ঝুঁকি বেশি)
*উচ্চ অক্ষিচাপ যাদের আছে
*যাদের দূর দৃষ্টি এবং নিকট দৃষ্টি সমস্যা আছে
*চোখের কোনও ক্ষত থাকলে
*ডায়াবেটিস, মাইগ্রেন, উচ্চ রক্তচাপ, স্বল্প রক্ত চলাচল ক্ষমতা অথবা অন্যান্য শারীরিক অসুবিধা

গ্লুকোমা রোগের চিকিৎসাঃ

গ্লুকোমা রোগ নির্ণিত হওয়ার পর বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা রয়েছে। কিছু উপদেশ মেনে চলতে হয় তাদের। সকালবেলা কেউ কেউ একসাথে এক লিটার, দেড় লিটার পানি খেয়ে ফেলে। এটি ত্যাগ করতে হবে। উচ্চ রক্তচাপের জন্য বিটাব্লকার জাতীয় ওষুধ রাত্রে খাওয়া যাবে না। যাদের পরিবারে গ্লুকোমা আছে তাদের এই বিষয়ে সতর্ক করা।
আর চিকিৎসার ক্ষেত্রে লেজার চিকিৎসা রয়েছে। ওষুধের চিকিৎসা রয়েছে। অস্ত্রোপচার রয়েছে। এই তিন রকম চিকিৎসা গ্লুকোমায় করা হয়।

গ্লুকোমা চিকিৎসা করলে লাভ কিঃ

আপনি বলছিলেন নার্ভে একবার সমস্যা হলে সেটি ফিরে আসে না। তাহলে এর চিকিৎসার গুরুত্বটা কোথায়?
জিনিসটার গুরুত্ব এখানেই যে যখন রোগটি শুরু হয়, ধরেন একজনের ১০ ভাগ বা ২০ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আধুনিক পরীক্ষার মাধ্যমে শুরুতেই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয় এবং কতখানি ক্ষতি হয়েছে সেটিও বোঝা যায়। তখন চিকিৎসা শুরু করা গেলে অন্ধত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব, কিন্তু অন্ধত্ব বরণ করার পর আর কোন উপায় থাকে না।

আমাদের দেশে শুরুতে গ্লুকোমা রোগ নির্ণয় করার সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব। গ্লুকোমা রোগ নির্ণয়ের জন্য সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে। আর যাদের গ্লুকোমা রোগ ধরা পড়ে গেছে তাদের নিয়মিত ওষুধ নিতে হবে। ওষুধ না নিলে নীরবে নার্ভের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। গ্লুকোমার কারণে নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ওই অন্ধত্ব হলে আর দৃষ্টি ফেরানো যায় না।